বেঙ্গলবুকস তার যাত্রাশুরম্নর বছর থেকেই যেভাবে সাড়া ফেলেছে তা আসলে বেশি বই প্রকাশের জন্য নয়, বাছাইকৃত ভালো বই এবং লেখকের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেবার দায়বদ্ধতায়।
চোখের সামনে এখনও যা ভেসে বেড়ায়, যা স্মৃতি হয়ে উঠতে এখনও কিছু সময় বাকি, তার জন্য কাতরতা বা ফিরে দেখার মতো কিছু না ঘটলেও ‘সাড়ে ৩ দিনের পত্রিকা’র পুনরাবর্তন যেন একটা সাইকেলের চাকার পিঠে চেপে ঘুরে এসে ঠিক আগের জায়গাতেই বসা। যদিও সে জায়গাটি ঠিক আগের মতো থাকে না, বদলে যায় তার আয়তন বা কলেবর; আদলের, চেহারার ঘটে পরিবর্তন। পত্রিকাটি বছর ঘুরে বর্ষপ–র্তির মেজাজ নিয়ে এখন একুশে বইমেলা ২০২৪-এর শেষ প্রান্ত্মে। একটি পত্রিকা যেভাবে কেবল বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হয়েও এর পরিধিকে ছাপিয়ে বৃহৎ পাঠক-লেখক- সংস্কৃতিপ্রেমীদের নজর কেড়েছে, তা অভূতপ–র্ব।
বই এবং বইয়ের প্রকাশকে কেন্দ্র করে লেখক-প্রকাশক-পাঠকের একটি যুগপৎ মিলনমেলা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ও সুযোগ আছে এ বইমেলার। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম বইমেলা এবং এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা বিবেচনা করলে এরকম বইমেলা বিশ্বে বিরল। কিন্তু সবকিছুর ম–লে যে বইয়ের কারবার, মানে বই-বাণিজ্য; সৃজনশীল প্রকাশনা হিসেবে তার বিসত্মার ও ভবিষ্যতের পদড়্গেপ কেমন হতে পারে সে নিয়ে ভাবনা বেশি জরম্নরি। পত্রিকাটি সে কারণে দেশের গুরম্নত্বপ–র্ণ লেখক ও প্রকাশকদের
সাড়্গাৎকার বিশেষ গুরম্নত্ব দিয়ে প্রকাশ করছে। এর ভেতর দিয়ে পত্রিকাটি একুশে বইমেলার সাহিত্যিক মুখপত্র হিসেবেও ভূমিকা রাখতে পারছে।
লেখকদের মতোই আমাদের প্রয়োজন সচেতন প্রকাশক। প্রকাশনা জগতকেও অন্যান্য কিছুর মতোই স্মার্ট হতে হয়, হাল আমলের সাথে যুক্ত
হতে হয়, মানুষের-সমাজের ভাবনা ও অভিব্যক্তির অনুঘটক হিসেবে লেখক-পাঠকের সেতুবন্ধন তৈরি করতে হয়। ‘সাড়ে ৩ দিনের পত্রিকা’টি প্রকাশমুহ–র্ত থেকেই এমন আশা রেখেই কাজ করছে, যা বইমেলার সংস্কৃতিকে ও প্রকাশনাশিল্পের পরম্পরাকে একটা পত্রিকার ভেতর দিয়ে প্রকাশ করে যাওয়া এবং সময়ের ভাবনাগুলোকে সংরড়্গিত করতে চাওয়া। এ ড়্গেত্রে আমরা কতটা সফল হয়েছি তা লেখক-পাঠকরা বিচার করবেন। সামনের দিকে, একটা সুন্দর প্রকাশনা জগতের দিকে, যেখানে পাঠকেরা সহজেই খুঁজে পাবেন তার কাঙ্ড়্গিত বই, লেখকও পাবেন আকাঙ্ড়্গিত বইয়ের প্রোডাকশন ও সম্মানি; এমনটা আশা করা খুব বেশি কিছু তো নয়।
বেঙ্গলবুকস ও কিন্ডারবুকস শুরম্ন থেকেই ওহ-ফবঢ়ঃয চঁনষরংযরহম অর্থাৎ গভীরতর প্রকাশনার কথা বলে আসছে। এটা প্রকাশনার জন্য একটা দিকনির্দেশনাম–লক ও নেতৃত্বশীল অবস্থান। লেখক লিখবেন আর প্রকাশক ছেপে ফেলবেন—প্রকাশনায় এমন দিন আর নেই। দুনিয়াব্যাপী বইয়ের প্রকাশনা এমন এক বৈচিত্র্যময় উচ্চতায় চলে গেছে যে, এটাকে লেখক-প্রকাশক যৌথ প্রযোজনার একধরনের প্রোডাকশন হাউজ বলা চলে। বিশ্বের অনেক বড় বড় প্রকাশক এখন লিখন-নির্যাস বা আইডিয়াটুকু লুফে নিয়ে নিজেরাই স্টাফ-রাইটার দিয়ে পেশাদারত্ব সৃষ্টি করেন। কেবল প্রম্নফ বা এডিটিংই নয়, চাই আরও বাড়তি লিখনকৌশল, যা সময়ের হাল ও মনসত্মত্ত্বকে আমলে নেয়, প্রয়োজনীয় প্রকাশ-ভাষ্য তৈরি করে।
শিশু-কিশোর প্রকাশনা, বিশেষ করে কিন্ডারবুকস-এর ড়্গেত্রে আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে কাজ করে থাকি, প্রতিটি শিশু-কিশোর রচনাই যৌথ-প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে একধরনের নির্মাণযজ্ঞ বলা চলে। শিশুদের আসলে মনসত্মত্ত্ব হয় না, তাদের হয় কল্পনাজগত; এ কল্পনাজগতের সাথে নিজে শিশু না হলে, লেখক-প্রকাশকের যৌথ শৈশব না জেগে উঠলে শিশুতোষ প্রকাশনা
মুখ থুবড়ে পড়বে।
বাংলাদেশের বর্তমান শিশুতোষ প্রকাশনার বড়
বেহাল অবস্থা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য চাই প্রকাশক ও লেখকদের সমন্বিত প্রয়াস। এমনকি কৈশোরক-প্রকাশনাজগতও গোলমেলে অবস্থায় রয়েছে। কিশোরদের জন্য যা প্রয়োজন তা মেটাতে পারছি না আমরা। এসব কথা মাথায় রেখেই কিন্ডারবুকস-এর অগ্রযাত্রা। এর সাথে যুক্ত হলো এবার বেঙ্গলবুকস।

বেঙ্গলবুকস-এ আমরা বড়দের প্রকৃত সাহিত্যিক বোধ ও সংবেদনাকে আমলে নিয়ে কাজ শুরম্ন করি। অনুবাদ, দর্শন, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, সাড়্গাৎকার—এমনসব প্রচলিত ধারার সাহিত্যের ভেতর বিষয় ও ভাবনার গভীরতা এবং তরম্নণ লেখকদের লেখালেখিকে গুরম্নত্বসহকারে বিবেচনা করা। সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি, প্রকাশনার রয়্যালটি—এসব ব্যাপারে একেবারে পেশাদারি ভাবনা রয়েছে আমাদের। বেঙ্গলবুকস শুরম্ন থেকেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেয়েছে যে, কোনো বইই অগ্রিম সম্মানি ছাড়া আমরা বের করব না; এবং এটার একটা প্রাথমিক সাফল্যও আমরা দেখতে পেয়েছি, দেখেছি যে এতে ছোট-বড় সব লেখকই সম্মানিতবোধ করছেন,
নিজেদের অসিত্মত্ববোধটুকু জানান দিতে পারছেন, প্রকাশক হিসেবে আমরাও গর্ব করে বলতে পারছি যে, এই হলো প্রকৃত প্রকাশনাজগত।
বেঙ্গলবুকস তার যাত্রাশুরম্নর বছর থেকেই যেভাবে সাড়া ফেলেছে তা আসলে বেশি বই প্রকাশের জন্য নয়, বাছাইকৃত ভালো বই এবং লেখকের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেবার দায়বদ্ধতায়। এর বাইরে আরও একটি গুরম্নত্বপ–র্ণ বিষয় হলো বইয়ের প্রোডাকশন। এ ড়্গেত্রে আপোসহীন মানসিকতা আমাদের আছে এবং আমরা যেতে চাই সে সুদ–রের পানে—যেখানে একদিন এই ‘সাড়ে ৩ দিনের পত্রিকা’র ভেতর লেখকদের সাথে পাঠকরাও এসে যুক্ত হবেন তাদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা নিয়ে; আমরা খুলে দেব আমাদের দুয়ার, যেখানে একাকার হয়ে মিশে যাবে গভীরতর প্রকাশনার ম–ল তিনটি ড়্গেত্র—লেখক-পাঠক-প্রকাশক। আমরা সেই সুদিনের অপেড়্গায়…