কবি

আহসান হাবীব

মাহমুদ সরফরাজের দাঁত ব্যথা, বেশ ভালোই ব্যথা। ডেন্টিস্ট দেখিয়েছে। ডাক্তার বলেছেন দুটো দাঁতে রম্নট ক্যানেল করতে হবে আর একটা দাঁত ফেলেই দিতে হবে। তবে আপাতত ব্যথা কমার ওষুধ দিয়েছেন। ব্যথা কিছু কমলেও পুরোপুরি যায়নি। ডাক্তার বলেছেন এই তিন দাঁতের গতি করতে খরচ পড়বে ২৫ হাজার টাকা। একবারে দিতে হবে না, ধাপে ধাপে কাজ হবে, ধাপে ধাপে দিলেই হবে।
এখানে বলে নেওয়া ভালো, মাহমুদ সরফরাজ একটা এনজিওতে কাজ করেন, তবে তিনি মূলত একজন কবি। এ পর্যšত্ম ২ হাজার কবিতা তিনি লিখেছেন, যার মধ্যে সনেটের সংখ্যা পাঁচশ। সনেট তার ভালো লাগে। কিছু লিমেরিক টাইপের ছড়া কবিতাও আছে। তার সংখ্যা এক-দেড়শ হবে। তবে তার একটি কাব্যগ্রন্থ এবারের বইমেলায় বের করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। দুয়েকজন প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রকাশকরা জানিয়েছেন তাকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। তাহলে তারা তিনশ কপি বই বের করে দেবেন।
কিন্তু এখন মুশকিল হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে দাঁত তুলবেন, না কবিতার বই বের করবেন? তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। দাঁতের যন্ত্রণা সহ্য করা মুশকিল। কিন্তু বইমেলায় কবিতার বই বের হবে না, এর যন্ত্রণা তো আরও গভীর। কী করা?
শেষ পর্যšত্ম মতামতের জন্য বন্ধুদের দ্বারস্থ হলেন। (ঐ কবিতা নিয়েই স্ত্রী রাগ করে বাপের বাড়ি, তাই আপাতত বন্ধুরাই ভরসা)
তোরা কী বলিস, দাঁতের চিকিৎসা করব, না কবিতার বই বের করব?
অবশ্যই কবিতার বই বের করবি।
তাহলে দাঁতের কী হবে?
সে পরেও করা যাবে।
কিন্তু দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বুঝলে তো… উউউ, গালে হাত দেন কবি মাহমুদ সরফরাজ। ওষুুধের প্রভাব মনে হয় কেটে গেছে, তাই ব্যথা আবার শুরম্ন হয়েছে। আরেক বন্ধু মুখ খুললÑ
তুই জানিস দৈনিক মহাকাল পত্রিকার সাহিত্য পাতায় তোর ছাপা হওয়া ‘কষ্টিতে যষ্টি মধু’র কবিতাটা পড়ে আমার কোষ্ঠকাঠিন্য সেরে গেছে… টয়লেটে বসে যখন তৃতীয় লাইনে…
তু-তুই টয়লেটে বসে আমার কবিতা পড়িস?
তাতে সমস্যা কী?
সমস্যা নাই? কবিতার মতো একটা ডেলিকেট বিষয়… তুই তুই…
এই সময় ফোন বেজে উঠল।
হ্যালো! মাহমুদ সরফরাজ বলছেন?
বলছি।
আপনার কবিতার বই কি বের করবেন? আজকালের মধ্যে কিছু অ্যাডভান্স না করলে তো আমি অন্য বই উঠিয়ে দেব। মেলার চাপ… প্রকাশক ফোনে জানালেন।
আচ্ছা আচ্ছা… আমি জানাচ্ছি আপনাকেÑ বলতেই দ্বিতীয় ফোনটি এলো।
হ্যালো! মাহমুদ সরফরাজ বলছেন?
বলছি।
একটা মেয়ের মিষ্টি গলা ‘আমি কেয়ারী ডেন্টাল ক্লিনিক’ থেকে বলছি। আজ আপনার একটা দাঁতের রম্নট ক্যানেল শুরম্ন করার কথা। জলদি চলে আসুন, স্যার ফ্রি আছেন। আমরা অপেড়্গা করছি।
ফোন বন্ধ করে গুম হয়ে বসে রইলেন কবি মাহমুদ সরফরাজ। তখনই তৃতীয় ফোনটা এলো। স্ত্রীর ফোন! রাগ কমেছে বোধ হয়, আনতে যেতে হবে।
হ্যালো, আসছ না কেন?
তোমাদের বাসায়? আসছি।
আমাদের বাসায় না।
তাহলে কোথায়?
আবার কোথায়, ‘কেয়ারী ডেন্টাল ক্লিনিকে’; কখন থেকে বসে আছি। আজ তোমার ট্রিটমেন্টের তারিখ। ভুলে গেছ?
অবাক হলেন কবি মাহমুদ সরফরাজ।
কিন্তু…
কোনো কিন্তু নয়, জলদি আসো। ডাক্তার সাহেব আজ ফ্রি আছেন। আর হ্যাঁ… কবিতার বইয়ের টাকা আমি দেব। ও নিয়ে ভেব না। প্রকাশককে বলো কাজ শুরম্ন করতে।
কবি মাহমুদ সরফরাজের চারদিকে হঠাৎ আলো ঝলমল করে উঠল যেন।

Author

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular