-নূরুননবী শান্ত
কুয়াশা। গায়ে গা লাগানো মানুষ। রাজধানীমুখী বাস ঠাসা। ত্র¯ত্ম কন্ডাক্টর দরজার কাছ থেকে ঠেলে দিচ্ছে ভেতরের দিকে যাত্রীদের। আরও মানুষের দাঁড়ানোর জায়গা বের করা দরকার। পেছনের সিটের সারিতে বসা বিরক্ত মানুষের চোখের কাছে লেপ্টালেপ্টি ময়মরি-বয়রক। দুলছে। মাথায় স্বপ্নহীন চঞ্চলতা। নাকে গুমোট গন্ধ, মানুষের। মনে নানান কথাÑকিছু তার বিগত, কিছু আগত অজানা দিনের, দুজনারই।
বয়রক মুচির ছেলে। নিবাস খড়খড়িয়া। জেলা গাইবান্ধা। সেইখানে মুচিগিরির দিন তার বাপের
আমলেই খতম। আজ মানুষের পায়ে পায়ে পস্নাস্টিক স্যান্ডেল, কাপড়ের জুতা, বাজারে ও বাথরম্নমে যাওয়ার অভ্যাসের অংশ। মাঠের কাজে, পাড়ায় আর বাড়ি-ঘরে চলে খালি পা। খড়খড়িয়ার মানুষ চামড়ার জিনিসের নাগাল পায় না। দরকার মনে করেও না। তাতে মুচির কদর ফুরায়েছে বয়রকের জন্মপূর্বে। মুচির ছেলে বয়রক একদিন ইস্কুলে গিয়ে আর যায় নাই। মানুষের ছেলেরা তাকে পাশে বসতে দেয় নাই। তারপর থেকে বয়রক মনের আনন্দে নাচে, গান গায়, আর আকাশের দিকে তাকায়ে ডায়ালগ
ছাড়েÑআমি কেউ না, আমি তো কেউ না! দেখতে দেখতে বাড়šত্ম বয়সে বয়রক ঢোকে কুশান গানের দলে। ফর্সা সুরতের বয়রককে কুশান মাস্টার পাট দেয় সিতার। ঢেউ তুলতে পারবে বয়রক যুবকের বুকে, কুশান মাস্টারের
মনে হয়, বেদনা জাগাতে পারবে নারীর হৃদয়ে। যুবকেরা দিওয়ানা হবে সিতারূপী বয়রকের, ঠিকঠাক সাজোতে পারলে। কিন্তু তেমন ঘটে না, কুশান জমে না।
গরিবী হটানোর যুদ্ধাবস্থা খড়খড়িয়ার ঘরে ঘরে। কুশান পালা গরিবী যুগের সৌখিনতা, শখ,
বাউদিয়ামি। অতীত শখের গল্প ছইলেরা শুনবে, তেমন সময় নাই গল্পকার কিংবা শ্রোতা কারোরই। ইস্কুলে যাও, কোচিং কর। তা না হলে বাপ-মায়ের রোজগারে হাত লাগাও। কামাই কর। উন্নতি কর। ওয়াজে তো শোনোইÑ নাচগান বেদাত কার্য। বাউদিয়ামির দিন নাই আর। খড়খড়িয়ায় শহরের হাওয়া বয়, তাতে কুশানের ভাওয়াইয়া লহরী খাপ খায় না। কলের লাঙ্গল, চাউলের কল আর ভটভটির শব্দের উপর দিয়ে দরকার হয়ে পড়ে কান দাপানো হাই বিট মিউজিক। তুমি ঘরে বসেই শুনতে পাবা পাড়ার মোড়ের লাউড স্পিকার। সেইখানে লাল-নীল বাত্তি জ্বলে আর নেভে। চোখ নাচানো রঙিন আলোর ধাক্কায় কুশান পালা ঐতিহ্য সভার ভদ্র আলাপÑএইভাবে মোদের গরব হয়ে আছে।
বয়রক তথাপি বাউদিয়া থাকে। উন্নতি বুঝতে তার ভালো লাগে না। কুশান জমুক আর না জমুক, দিওয়ানা সে হয় কুশান পালার হয়ে উঠতে না পারা গায়েন ময়মরির। দূরের সাংস্কৃতিক শহরের বার্ষিক ঐতিহ্য উৎসবে কুশান করার আমন্ত্রণ আসলে তখন ময়মরি আসে কুশান মাস্টারের তলবে, বোনারপাড়া বাসফোর
কলোনির এক ঘরের ভেতর থেকে, মুখে হিজাব জড়ায়ে, কলোনিবাসীর চোখ ফাঁকি দিয়ে। কুশান মাস্টার ময়মরির সুরেলা গলার এক্সট্রা খাতির করে। মাস্টারে কয়, খড়খড়িয়ার মানুষ বুঝ হারাইলে কী হবে, কুশান পালার কদর দ্যাশে কিন্তুক আছে, শিড়্গতি মানুষেরা ভালোবাসে, বিদেশেও নিয়া যাইতে পারে সরকার। মালিকুল নসিব সবাইরে কুশানের ন্যাক দান করেন না। তোমার উপর পরম আশীর্বাদ আছে। তোমার একদিন নাম হইবে। যদিও নাম হয় না, বদনাম হয় মরিয়মের। বাসফোর কলোনিতে, বোনারপাড়ায়, এমনকি খড়খড়িয়াতেও ময়মরি খারাপ মেয়ের খ্যাতিলাভ করে। তথাপি ময়মরির মিহি সুরে বাউদিয়া বয়রকের বুকে ছোট ছোট ঢেউ ওঠে, যেমন ঢেউ দেখা যায় বালাসি ঘাটে খাড়া হয়ে দূরের যমুনার ওপারের ঘাটের দিকে দৃষ্টিপাতের চেষ্টা করলে। যমুনার দুই পার মিশ খায় না যেমন, বাসফোরে আর মুচিতে মিশ তেমনি খায় না। তারপরও আশ্চর্য এই যে খড়খড়িয়ার কুশান পালা শহরের বার্ষিক ঐতিহ্য উৎসবে জমে ওঠে ময়মরি বাসফোরের সুরের যাদু আর সতী বয়রক মুচির বিষাদের মোহে। খবরের কাগজে লেখাও হয়। টেলিভিশনের খবরে দেখায়ও এক ঝলক। বছরে একবার।
যমুনা ভাঙে। বছর বছর বালাসি ঘাট সরে সরে আসে। তারপর একদিন ঘাট উঠে যায় দূরের যমুনাসেতুর দাপুটে আনন্দে। কুশানীরা শহরের বার্ষিক ঐতিহ্য উৎসবে ডাক পাবার অপেড়্গা
বুকে নিয়ে দোকানদারি, কামলাগিরি করে আর অটো চালায় বছরভর। খড়খড়িয়ার মানুষের বুকে নয়া সাহস দেখা দেয়। যমুনা ফুড়––ৎ করে পার হয়ে তারা দূর দেশে পাড়ি দিতে থাকে ভাগ্য বদলাইতে। আর যারা থাকে নিশ্চিšেত্ম খড়খড়িয়ার, হাতে হাতে তাদের হাজার প্রকার মউজ। ঘাড় গুঁজে থাকে তারা পথের ধারে, ঘরে, দোকানের টুলে, চায়ের স্টলে, যমুনাপাড়ের বুড়ো বটগাছের তলায়। দুনিয়ার ছায়াছবির কায়দায় নিজের নিজের মুখ উজ্জ্বল করতে চায় সেল্ফি, টিকটকের আয়নায়। দিনে দিনে কুশানীরা কেউ কেউ দুই-একটা অবশিষ্ট গেরস্থবাড়িতে কাজ করে আর ঋণের দায় ঘাড়ে নিয়ে গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়া, ঢাকা, কুমিলস্না, দুবাইমুখে দৌড় দেয়। পিছে পড়ে থাকে কুশান মাস্টার। একলা লাগে তার। খড়খড়িয়ার চারধারে বাজার-হাট বড় হতে হতে রা¯ত্মার উপরে উঠে আসে। পাকা পাকা দোকানে তলস্নাট সয়লাব। কে যে কেনে আর কে যে বেচে তা ঠাওর করা সহজ নয়। আলিশান হিমাগার, তেলের পাম্প, চাউলের আড়ৎ, মাছহাটি, কসাই পট্টি, তরকারির থান থই থই করে খানা-খাদ্যে-মালে। পলিব্যাগে ঝোলে বিস্কুট, পাউরম্নটি, কলা, বার্গার, কোক, পেপসি, পিঠা, পিয়াজু, পুরি, পেয়ারা, চিপস, কলা কত কী। চিরস্থায়ী মেলা। ভিনদেশি মানুষেরা খালি ট্রাক নিয়ে আসে, ভরা ট্রাকে করে চলে যায়। জগৎ গমগম করে দিন-রাত হরঘণ্টা। মানুষ দৌড়ায়। কেউ কারো ভিতি দেখে না। কুশান মাস্টার দিশা পায় না। ম্যারম্যারা মুখে নিয়া খড়খড়িয়া মার্কেটের রঙ বেরঙের উজ্জ্বলতার দিকে হা করে তাকায়ে থাকে, বয়রক কাছে আসলে দেখেও দেখে না, ময়মরি দেখা করতে আসলে উচ্ছ্বাসে বলে না, ধর তোÑও কালা, আর না বাজান বাঁশরি, বাঁশি শুনে ঘরে রইতে না পারি…।
একদিন দুপুর বেলা। বয়রক রেল কলোনির ঘুপচিতে চোরের মতোন ঘুরতে ঘুরতে উটকে বের করে ময়মরিকে। বেড়ার উপর রঙের আল্পনা করা এক ছাপড়াঘরের দুয়ারের আগে খাড়া হয়ে ময়মরিকে কয়Ñ খিদা নাগছে রে ময়মরি! গলা দিয়ে তারপর আর কোনো ডায়ালগ বারায় না। একবার ঢোক গিলে নিয়ে হাসি হাসি মুখে ময়মরির আগে খাড়া হয়ে থাকে, যেন জগৎ সুখে ভরপুর! ময়মরি কী করে তার তাল খুঁজে পায় না। তাল ধরায়ে দিতে বয়রক ভাঙা গলায় ময়মরির কানের বগলে আ¯েত্ম করে কয়, ময়মরি, যাবু মোর সাথে, দূরে, বড় শহরে? সেইখানে সকলেই ধনি লোক শুনি, তারা গান শোনে, নাচ দেখে, টাকা দেয়, ইজ্জত দেয়। মাইনষে কয়, মাস্টারও বোলে ইন্ডিয়া চলি যায়Ñ কাইল, না হয় পড়শু। এই দ্যাশে না থাকপে। হামরাও যাই চলি, চল। যাবু? ঘরের দুয়ারে ঝোলানো সাজ-পোশাকের ব্যাগের তলা হাতড়ে কাচা আমড়া একটা বের করে বয়রকের হাতে দিয়ে কয় ময়মরিÑ চুষি খান! বয়রক নেয় আমড়া, চোষে না, হাসে, কয়Ñ যাবু? ময়মরি চুপ করে থাকে। মাথা নিচু, কয়, দ্যাশ ছাড়ি যাব! বয়রক

পিছন ফিরে দেখতে দেখতে কয়, হামরা কে? কেউ না! কায় পোছে? কেউ না! তারপর বয়রক ঘুপচির বাইরে বের হয়। থামে। একবার পিছনে তাকায়, একবার সামনে। খানিক পরে, ময়মরিও বের হয়। সাজ-পোশাকের ব্যাগ ঘাড়ে ঝুলায়ে পিছুডাকে, শোনেন। ময়মরির মুখ তখন হিজাবে ঢাকা নয়। বয়রক চমকায়, কান পাতে। দেখে যে, পৌষ মাসের ঝাপসা সন্ধ্যায় শুকনা মুখের ময়মরির নাকের ডগায় ঘাম ফোঁটা ফোঁটা জমে আছে। ঠোঁটে তার ঝুলে আছে টেনশনমাখা হাসি। বয়রক চোখ বন্ধ করে ঢোলের বাজনা, হারমনিয়ামের সুর, দোতারার ডাং যেন ঘুপচির ভিতর থেকে কোথাও গমগম করে বেজে উঠে ক্রমে দূরে মিলায়ে যায়, শোনে।
ময়মরি-বয়রক জানতেই পারে নাই, বাইরে সেদিন হরতাল। রা¯ত্মায় ভিড় তবু। বিভিন্ন শব্দ। ভোটের গান বাজাতে বাজাতে মাইকের রিকশা যায়, আসে। কান ঝালাপালা। বাতাসে ধুলা ওড়ে। নাকে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে হয়। বাসস্ট্যান্ডে ভিড়। বাসটাস না চলে। মাইনষে কয়, হরতাল হইলে বাসে আগুন ধরায়া দেয়, জ্যাšত্ম মানুষ পোড়ায়ে দেয়। নিজের বুকের ভেতরে ধুক ধুক শব্দ শোনা যায়। তার মধ্যে রঙচটা একটা বাস কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে চালু হয়। মানুষ মৌমাছির মতো সেইটাতে উঠে ভন ভন করতে থাকে। গায়ের জোর খাটায়ে সেই বাসে উঠে পড়ে ময়মরি-বয়রক। খাড়া হবার জো পর্যšত্ম নাই। আরও মানুষের ঠেলাগুতায় বাসের পেছনের দিকে শেষ সীমানায় আটকে পড়ে তারা দুইজন। ময়মরি কয়, চলেন, নামি যাই, যদি কেউ আগুন ধরায়া দেয়! শুনতেছি, মাইনষে কইতেছে, যখন তখন বাসে আগুন ধরায়া দিতে পারে। চলেন, নামি যাই। ভয় করে। বয়রক মিন মিন করে কয়, কত মানুষ যাইতেছে! ভয় না পাইস। তাবাদে সমাজের মানুষ দেখি ফালাইছে, এলা ফিরি গেইলে ইজ্জত থাকপে নোহায়। বাসফোর কলোনির মাইনষে
মারি ফেলাইবে। ময়মরি চুপ করে বয়রকের গাও ঘেষে দাঁড়ায়, নিচু গলায় কয়, সমাজ কি আর অতশত দেখে, কারো টাইম নাই কারো তামসা দেখার, মনে থোন, হামরা তো কেউ না, নোহায়? বয়রক কয়, দেখে, যেইটা না দেখলে ভালো হয় সেইটা দেখে, যেইটা দেখা দরকার সেইটা দেখে না! পেছনের দিকি আর না ফিরিস ময়মরি। ময়মরি কয়, অচিন দ্যাশের দিকে কই যাইতেছি? বয়রক কয়, খড়খড়িয়াকে কি চিনি? তুই কি চিনিস বাসফোর কলোনি? কেউ কাক্কো চিনি না। হামারঘরের কেউ নাই, কেউ না। চল যাই, বদনামের দ্যাশ থাকি হারায়ে যাই। ময়মরির পিঠে এক বুড়োর কনুয়ের হাড্ডি লেগে থাকে। জারের কাল। মানুষের গায়ের গরমে তবু গা খিতখিত করে। বাস চলতে থাকে। থামে। আবার চলে। বেলা ডুবে যায়। বাইরে বিদ্যুতের আলো। সবখানে আলো সড়কের ধার দিয়ে। কুয়াশায় তবু ঢাকা থাকে আলোকিত চরাচর। বাসের ভেতরে একবার বাইরে থেকে আলোর ছটা আসে, একবার ঘোর অন্ধকার।
কন্ডাক্টর চিলস্নায়, পেছন দিকি ঠেলা দেন, হুই মানুষ, দরজার কাছ থাকি সরেন। ভিড়ের আড়ালে এক যাত্রী আওয়াজ দেয়, শুয়োরের বাচ্চার চোউক নাই? চোউক নাই, বাহানচোত? আর কত ঠেলবে হে? হামরা কি আলু নাকিন যে ব¯ত্মাত ভরেয়া ঝাঁকি দিবু? ঘ্যাচ করে ব্রেকে ড্রাইভার পা দেয়, কয়, অয়, কী হইছে রে? কে
কতা কয়? কোন শালা খানকির ছইল ফাসকতা কয়? বেশি কতা কইলে নামেয়া দে। হরতালের মধ্যে বাস নামাইছি, জান হাতে নিছি, বোঝে না চুদির ভায়েরা? কাক্কো টের পাই? কোনো বালছিড়ার কতা শুনতে রাজি না! দে, নামেয়া দে! কন্ডাক্টর কয়, বাড়েন ও¯ত্মাদ, পেছন দিকি কান দিয়েন না! ড্রাইভার কয়, বাড়ে ক্যামনে হে? তোর চোউক নাই চুতমারানি? কুয়াশা দেকিসনে হারামজাদা? তুই কি বুজবু! বেশি কতা কইল তোকও নামেয়া দিম, তারবাদে রা¯ত্মা বাড়িস শালার বেটা কুয়াশার রাইতে! ভিড়ের আড়ালে আরেক যাত্রী চিক্কর দিয়ে ওঠে, এই শালার মফিজেরা, থাম হে, থাম। ভরা বাসের মদ্দে আর একটা ফাসকতা কইলে খবর করি ছাড়ি দেম। শালার ছোটলোক, বেয়াদ্দপ, উত্তুরে ভুত! আরও মানুষ যোগ দেয়, কয়, হুই মানুষ, ডেরাইভারোক না খেপান, চুপ করেন হে, এত কতা কিসের, হা! ময়মরি কয় বয়রককে, আর পারতিছি না খাড়া হয়া থাকতে! বয়রকেরও দুর্বল লাগে, কয়, হামরা কি আর ভিআইপি হয়া গেছি রে ময়মরি? সহ্য করি যাওয়া নাগবে। সহ্যই আসল কতা, বোজেন নাই? মাস্টারে এই তো শিখাইছে এতকাল, সহ্যশক্তি থাকা লাগে, নোহায়? ময়মরি মুখ কুচকে কয়, মানুষ কেমন ফাসকতা কয়, দেখেন, সহ্য না হয়। বয়রক হাসে, কয়, ঠিক হয়া যাইবে। অচিন দ্যাশে হামারঘরের নয়া জীবন হইবে। অচিন মানুষের কাছে চায়া খাইতেও শরমের কিছু থাকপে না। খালি রা¯ত্মাখানি সহ্য কর।
কিন্তু অবস্থা ক্রমে কেরোসিন হতে থাকে। ময়মরি কয়, শোনেন, কেরোসিনের গন্ধ পাইতেছি! বয়রক নাক টানে, আরে হয়, কেরোসিনের গন্ধ।
ওও ভাইও, থামেন, কেরোসিনের গন্ধ পাইতেছি, থামেন। কেউ মনে কয় ঢালি দিছে, এলা যদিক্যাল আগুন ধরায়া দেয়, হায় ভগমান, থামেন। বাসের ভেতরে হৈ হৈ পড়ে যায়। বাস থামে ঘ্যাচ করে। এ ওর গায়ের উপর হুমড়ে পড়ে। আলস্না রে আলস্না! ড্রাইভার লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে ডান পা মচকে রা¯ত্মার নিচে ধানখেতে গড়ায়। হুড়োহুড়ি ঠেলাঠেলিতে কারো পাঁজরের হাড্ডি মট করে ভাঙে। জানালা দিয়ে লাফ দিতে গিয়ে মাথা ফাটে কারো। কয়েকটা শিশু আতংকে কাঁদে। আর্তচিৎকার শুনে মহাসড়কের ধার থেকে রাত জেগে হিন্দি সিনেমা দেখা ছেড়ে গ্রামবাসী ছুটে আসে। ময়মরি বয়রকের হাত ধরে সবশেষে নেমে আসে বাস থেকে। কপাল ভালো সকলের। তখনও আগুন জ্বলে ওঠে নাই। সড়কের নিচে ধানখেতে নামতে গিয়ে আছাড় খায় ময়মরি। বয়রক বাড়šত্ম ধানখেতের হিমশীতল কাদা-পানি থেকে তুলে ময়মরিকে টেনে আরও তফাতে নেয়। হা করে খাড়া হয়ে চেয়ে থাকে কুয়াশা মোড়ানো বাসের দপ করে জ্বলে ওঠা দেখার অপেড়্গায়। সড়কের উপরে, এধারে, ওধারে ভয়ার্ত মানুষেরা ভিড় করে। পরিত্যক্ত বাসের ছাদের উপর কুয়াশা নেমে আসতে দেখে তারা। কেউ একজন বলে, কিডা দেখছে আগুন? হা, স্বপন দেখছে নাকি? কই? কিডা? বয়রক ভাঙা গলায় কয়, কেরোসিনের গন্ধ তো পাইছি, সত্যিই পাইছি! ময়মরি কয়, আর খনিকড়্গণ থাকলে বমি করি দিলাম হয়! এমন ঝাঁঝ! কুয়াশায় ঢেউ তুলে দুজন মানুষ ময়মরি-বয়রকের আগে খাড়া হয়। তারা কয়, এই শালারা, ফাইজলামি করেন! দ্যাশের পরিস্থিতি বোঝেন না? কিডা আপনেরা? বয়রক মাথু নিচু করে থাকে, ছোট করে কয়, কেউ না, না চিনবেন। ময়মরি ঘাড়ের পেছন থেকে হিজাব টেনে মুখের উপরে ফেলে। আ¯েত্ম আ¯েত্ম গুঞ্জন শুরম্ন হয় সড়কের উপরে, এধারে, ওধারে, সড়কের নিচে বাড়šত্ম ধানখেতে। হৈ হৈ রব ওঠে ক্রমে। যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে কলবল কথা বলে। পরিত্যক্ত বাসের ছাদের উপর কুয়াশা ঘন হয়ে আসে। বাসের কাছে গিয়ে কেউ কেরোসিনের গন্ধ শোঁকার সাহস করে না। একজনও না। কেউ না।
ওও ভাইও, থামেন, কেরোসিনের গন্ধ পাইতেছি, থামেন। কেউ মনে কয় ঢালি দিছে, এলা যদিক্যাল আগুন ধরায়া দেয়, হায় ভগমান, থামেন। বাসের ভেতরে হৈ হৈ পড়ে যায়। বাস থামে ঘ্যাচ করে। এ ওর গায়ের উপর হুমড়ে পড়ে। আলস্না রে আলস্না! ড্রাইভার লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে ডান পা মচকে রা¯ত্মার নিচে ধানখেতে গড়ায়। হুড়োহুড়ি ঠেলাঠেলিতে কারো পাঁজরের হাড্ডি মট করে ভাঙে। জানালা দিয়ে লাফ দিতে গিয়ে মাথা ফাটে কারো। কয়েকটা শিশু আতংকে কাঁদে। আর্তচিৎকার শুনে মহাসড়কের ধার থেকে রাত জেগে হিন্দি সিনেমা দেখা ছেড়ে গ্রামবাসী ছুটে আসে। ময়মরি বয়রকের হাত ধরে সবশেষে নেমে আসে বাস থেকে। কপাল ভালো সকলের। তখনও আগুন জ্বলে ওঠে নাই। সড়কের নিচে ধানখেতে নামতে গিয়ে আছাড় খায় ময়মরি। বয়রক বাড়šত্ম ধানখেতের হিমশীতল কাদা-পানি থেকে তুলে ময়মরিকে টেনে আরও তফাতে নেয়। হা করে খাড়া হয়ে চেয়ে থাকে কুয়াশা মোড়ানো বাসের দপ করে জ্বলে ওঠা দেখার অপেড়্গায়। সড়কের উপরে, এধারে, ওধারে ভয়ার্ত মানুষেরা ভিড় করে। পরিত্যক্ত বাসের ছাদের উপর কুয়াশা নেমে আসতে দেখে তারা। কেউ একজন বলে, কিডা দেখছে আগুন? হা, স্বপন দেখছে নাকি? কই? কিডা? বয়রক ভাঙা গলায় কয়, কেরোসিনের গন্ধ তো পাইছি, সত্যিই পাইছি! ময়মরি কয়, আর খনিকড়্গণ থাকলে বমি করি দিলাম হয়! এমন ঝাঁঝ! কুয়াশায় ঢেউ তুলে দুজন মানুষ ময়মরি-বয়রকের আগে খাড়া হয়। তারা কয়, এই শালারা, ফাইজলামি করেন! দ্যাশের পরিস্থিতি বোঝেন না? কিডা আপনেরা? বয়রক মাথু নিচু করে থাকে, ছোট করে কয়, কেউ না, না চিনবেন। ময়মরি ঘাড়ের পেছন থেকে হিজাব টেনে মুখের উপরে ফেলে। আ¯েত্ম আ¯েত্ম গুঞ্জন শুরম্ন হয় সড়কের উপরে, এধারে, ওধারে, সড়কের নিচে বাড়šত্ম ধানখেতে। হৈ হৈ রব ওঠে ক্রমে। যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে কলবল কথা বলে। পরিত্যক্ত বাসের ছাদের উপর কুয়াশা ঘন হয়ে আসে। বাসের কাছে গিয়ে কেউ কেরোসিনের গন্ধ শোঁকার সাহস করে না। একজনও না। কেউ না।