Homeফিকশনবাসায় বিড়াল রেখে কক্সবাজারে | দন্তস্য রওশন

বাসায় বিড়াল রেখে কক্সবাজারে | দন্তস্য রওশন

থার বলল, আম্মু আমি রেডি। আমার ব্যাগ গোছানো শেষ। আমার মাত্র দুইটা ব্যাগ হয়েছে।
বাবা হেসে বললেন, এত জামাকাপড় দিয়ে কী করবে? আমরা কক্সবাজারে থাকবো তো দু’দিন।
মা বললেন, ওকে নিতে দাও। মন খারাপ করে দিও না।
বাসায় পোষা বিড়ালটা ওদের চারপাশে ঘুরঘুর করছিল। সবাই রেডি হচ্ছে। ব্যাগ গোছানো হচ্ছে। সেখান থেকে পিটান একটুও নড়ছিল না। বিড়ালটার নাম পিটান। বিড়ালটা বিরক্তই করছিল একরকম। মা বললেন, অ্যাই পিটান, এখান থেকে যা তো। ইথার বলল, আম্মু ওকে আমরা সঙ্গে নিয়ে যাই?
মা হাসেন। বলিস কী তুই! ওকে কে দেখবে?
বাবা একটু রাগ করে বললেন, ওকে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, ওকে এই মুহূর্তে পিটুনি দেওয়া দরকার। দেখছিস না তোর মাকে কেমন বিরক্ত করছে!
ইথার আস্তে আস্তে বলল, তাহলে তোমরা দুজন ঘুরে আসো। আমি আর পিটান বাসায় থাকি।
মা বললেন, এত ছোটো মানুষকে কি বাসায় রেখে যাওয়া যায়?
আমি আর ছোট নেই। ক্লাস ফোরে পড়ি। বাসার সব কাজ করতে পারি।
ইথারের এ কথা শুনে বাবা চোখ রাঙালেন।
শুক্রবার ভোরবেলা ওরা কক্সবাজার পৌঁছাল। রেলস্টেশন দেখে বাবা খুব খুশি! মাও খুশি হলেনÑ কী সুন্দর স্টেশন!
সমুদ্রের কাছাকাছি একটা হোটেলে উঠেছে ওরা। খুব আনন্দ করছে। দুপুরের দিকে সমুদ্রে নেমেছিল সবাই। প্রথমে ইথার অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেছে সমুদ্রের দিকে। এই প্রথমবারের মতো সমুদ্র দেখছে সে। বলল, আম্মু, এটা আমাদের দেশ না বিদেশ?
মা হাসেন। বলেন, আমাদের দেশটিও অনেক সুন্দর।
হোটেলে ফিরেই আবার বের হলো ওরা। বাইরে দুপুরের খাবার খাবে কাছাকাছি কোনো রেস্টুরেন্টে। তাড়াতাড়ি খাবার অর্ডার দিলো। রূপচাঁদা মাছ দিয়ে ভাত খা”িছল ইথার। হঠাৎ টেবিলের নিচে একটা বিড়াল এসে মিউমিউ করতে লাগল।
ইথার চমকে উঠে বলল, আম্মু পিটান, পিটান। ইথারের চিৎকার শুনে বিড়ালটা দৌড়ে পালাল।
মা হেসে বললেন, তুই কি পাগল হয়েছিস? এখানে পিটান আসবে কোথা থেকে।
ইথার পেস্নটের ভাত নাড়াচাড়া করছে কিন্তু খাচ্ছে না। তাই দেখে বাবা বললেন, খেতে না চাইলে হাত ধুয়ে উঠে পড়।
ইথার চেয়ার থেকে উঠে বেসিনের দিকে এগিয়ে গেল।
মা বললেন, বড্ড ভুল হয়ে গেছে। পিটানকে খাবার দিয়ে আসিনি। কথা ছিল ওর জন্য খাবার রেখে আসব এক জায়গায়। ঘরের জানালাগুলোও বন্ধ। পাশের বাসায় যে ফোন দিয়ে কিছু বলব তারও তো উপায় নেই। চাবি তো আমরা সঙ্গে নিয়ে এসেছি।
বাবা বললেন, অসুবিধা নেই! কিছু হলে ঢাকা গিয়ে একটা বিদেশি বিড়াল কিনে দেব।
এমন সময় ইথার এসে বসল। বলল, বাবা কী বলছিলে তুমি?
মা বললেন, না না। কিছু না।
আম্মু পিটান কী খাবে? মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল ইথার।
বাবা বললেন, চিন্তা করিস না। ইঁদুরটিঁদুর শিকার করে খেয়ে নেবে।
আমাদের বাসায় তো ইঁদুর নেই। ইথার বলল।
মা বললেন, এত কথা বলো না তো ইথার।
দু’দিন হয়ে গেছে, ওরা কক্সবাজার এসেছে। ভোরবেলা ছোট খালা ফোন করল উত্তরা থেকেÑ হ্যালো আপু, তোমরা কি বিড়ালটাকে বাসায় রেখে গেছ?
ইথারের মা বললেন, হ্যাঁ কেন?
ছোট খালা বলল, তোমাদের ল্যান্ড ফোন থেকে বারবার কল আসছে। ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে বলছেÑ মিয়াউ মিয়াউ।
এ কথা শুনে ইথারের বাবা হো-হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, তোমার ছোট বোনটার পাগলামি আর গেল না। বিড়াল নাকি তাকে ফোন করেছে!
অনেক রাত হয়েছে। মা-বাবা দুজনই ঘুমিয়ে পড়েছেন। মায়ের মোবাইলটা হাতে নেয় ইথার। তারপর তাদের বাসার ল্যান্ড ফোনে ফোন করে। না। কেউ ধরে না। বারবার ফোন করে। হঠাৎ ফোন রিসিভ করে কেউ।
মিয়াও মিয়াও।
এই শব্দ শুনে সে চিৎকার করে ওঠেÑ আম্মু আম্মু!
আম্মু কথা শুনে ইথারের কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে কানে চেপে ধরে। কই, কোনো শব্দ নেই। মিয়াও মিয়াও নেই।
তিনদিন পরে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয় ওরা। ইথারের মন খারাপ দেখে বাবা বলেন, আমি তো বলেছি তোমাকে কিউট একটা বিড়াল কিনে দেব। তাতেও তোমার মন ভালো হচ্ছে না!
পিটানকে টেলিফোন রিসিভ করা শিখিয়েছিল ইথার। ফোনে রিং হওয়ার পর কীভাবে সেটা ধরতে হয়। বিড়ালটা তার দুই পা দিয়ে ঠিক ঠিক ল্যান্ড ফোনের রিসিভার জড়িয়ে ধরে বলতোÑ মিয়াও। মিয়াও।
ছোট খালার কাছে ইথারদের বাসার একটি চাবি ছিল। তার খুব মন খারাপ হলো বিড়ালটার জন্য। সে দুপুরে ইথারদের বাসায় গেল। দরোজা খুলতেই দেখে পিটান টেলিফোন সেটের সামনে বসে আছে। টেলিফোনের রিসিভারটা লম্বা হয়ে ঝুলে আছে।
ছোট খালাকে দেখেই পিটান লাফিয়ে উঠল তার কোলে। খালা বুঝতে পারল ড়্গুধায় কাহিল হয়ে পড়েছে সে। তাড়াতাড়ি খালা গুঁড়া দুধ গরম করে একটি বাটিতে খেতে দিল পিটানকে। পিটান খুব দ্রম্নত চুকচুক শব্দ করে দুধ খেতে লাগল।
দুধ খাওয়ার পর বিড়ালটাকে কোলে নিয়ে ছোট খালা ফোন করল। বলল, বড় আপা ইথারকে দাও তো। মোবাইল কানে চেপে ধরে ইথার বলল, হ্যালো।
ওপাশ থেকে পিটান বলল, মিয়াও।
ইথার মায়ের দিকে মোবাইল এগিয়ে দিলÑ আম্মু পিটান ফোন ধরেছে।
আম্মু বললেন, হ্যালো।
ছোট খালা বলল, বড় আপা, ইথারকে চিন্তা করতে মানা করো। পিটানকে আমি আমার অফিসে নিয়ে যা”িছ। তোমরা বাসায় ফিরে আমাকে কল দিও।
বাবা জানতে চাইলেন, কী হয়েছে?
মা বললেন, কিছু হয়নি। তোমাকে আর কাঁটাবনে গিয়ে বিড়াল কিনতে হবে না

Author

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular