Homeঅনুবাদ‘অনেকে অনুবাদ করে নিজের নামে চালিয়ে দেন’

‘অনেকে অনুবাদ করে নিজের নামে চালিয়ে দেন’

নতুন শতাব্দীর দ্বিতীয় বছর ঝিঙেফুলের যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠানটি শিশু-কিশোরদের উপযোগী বই প্রকাশ করে সুনাম কুড়িয়েছে। বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি ঝিঙেফুল থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুবাদগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে সহস্রাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে এই প্রকাশনী থেকে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার গিয়াসউদ্দিন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুজাহিদ বিল্লাহ

……………………………………………………………………………………………………………….

শিশু-কিশোরদের জন্য বই আসলে কেমন হওয়া উচিত?

গিয়াসউদ্দিন : ব্যবসায়িক দিক দিয়ে আমাদের দেশে প্রকাশকরা চিšত্মা করে বড়দের উপন্যাস বা গল্প বেশি বিক্রি হয়। শিশুদের ‘শিশু’ বলে তারা মূল্যায়ন করে না। বড়দের জন্য তারা যেভাবে কাজ করে, শিশুদের জন্য সেভাবে ভাবে না। শিশুদের বইয়ের লাভ সেভাবে হয় না। কারণ শিশুদের বই করার খরচ তুলনামূলক বেশি। তাদের বই ফোর কালারে ছাপতে হয়। ইলাস্ট্রেশনের ব্যাপার থাকে। ফলে ব্যয় বেড়ে যায়। আবার বইটি সেভাবে বিক্রিও হয় না। এ কারণে অনেক প্রকাশনী আগ্রহ নিয়ে এলেও পরে খেই হারিয়ে ফেলে। এছাড়া লেখারও একটা ব্যাপার আছে। যুক্তাড়্গরহীন হলে ভালো। শিশু বুঝবে কিনা জিনিসগুলো লড়্গ রাখতে হয়। এগুলো একটু কঠিন। ফলে সবাই এদিকটাতে এগিয়ে আসে না।

এই অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়Ñশিশুসাহিত্যের মান আমরা ধরে রাখতে পারছি না।

গিয়াসউদ্দিন : হ্যাঁ, সত্য। এটা এগোচ্ছে না। এ জন্য লেখক, প্রকাশক উভয়ই দায়ী। আমি আমাদের কথা বলতে পারি। ভালো বই করতে হলে খরচ বেড়ে যায়। তখন দামও বেড়ে যায়। ক্রেতারা বলে, এত দাম কেন? তখন বাধ্য হয়েই সাদা-কালো ছাপ দিয়ে বই বের করা হয়। জয়নাল সাহেব, আগে যিনি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন, তিনি বলতেন, যারা শিশুদের বই প্রকাশ করে তারা জাতির উপকার করে, তারা লাভ করে না।
তাও ভালো, এখন মানুষ শিশুদের জন্য বই কেনে। প্রযুক্তি যত উন্নত হবে, মানুষ মেধাবী হবে এবং শিশুদের জন্য আরও উন্নতমানের কাজ হবে এটাই স্বাভাবিক। শিশুসাহিত্যও আগের চেয়ে এগিয়েছে।

প্রকাশনায় আপনার দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা। শিশুরা আসলে কেমন বই পছন্দ করে?

গিয়াসউদ্দিন : শিশুরা চার রঙের বই বেশি পছন্দ করে। ওরা বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে চায়। কিশোরদের সায়েন্স ফিকশনে আগ্রহ আছে। অনেকে ভূতের বই বের করে। আমরাও করি। যদিও ভূতের বই বলে কিছু নেই। আমরা সেই বইয়ের ভেতরে শিড়্গণীয় গল্প দিয়ে দেই।

আমরা লড়্গ করছি, অনুবাদ বইয়ে আগ্রহ বাড়ছে। বিদেশের শিশুসাহিত্যের অনুবাদ।

গিয়াসউদ্দিন : বিশ্বসাহিত্যের নির্যাস নিতে হলে অনুবাদের বিকল্প নেই। বিদেশে শিশুসাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ। তারা শিশুদের নিয়ে যেভাবে কাজ করে, আমরা কিন্তু সেভাবে কাজ করতে পারি না। তারা শিশুদের যতটা যত্ন নেয়, আমরা বাঙালিরা শিশুদের সেভাবে যত্ন নেই না। বিদেশি সংস্কৃতি এবং দেশি সংস্কৃতির পার্থক্য অনেক। আমার মতে, যারা বিদেশি বই অনুবাদ করে ছাপে, তারা কাজটা খারাপ করে না। ওদের স্টোরি এবং ছবি খুবই ভালো। অনেকে তো অনুবাদের সঙ্গে ছবিও স্ক্যান করে ছেপে দেয়।

বর্তমান সময়ের যে শিড়্গাব্যবস্থা, শিশুদের সাহিত্যচর্চার সঙ্গে তা কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করেন?

গিয়াসউদ্দিন : বর্তমান যে শিড়্গাব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেটা পুরোটাই প্র্যাকটিক্যাল। শিশুদের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তাদের যদি বোঝানো যায় তাহলে কিন্তু সেটা ভালো, খারাপ নয়। আমি মনে করি, সরকার যে পদ্ধতিটা চালু করেছে সেটা প্রশংসার দাবিদার।

বর্তমানে কারা ভালো শিশুসাহিত্য লিখছেন বলে আপনি মনে করেন?

গিয়াসউদ্দিন : নাম বলব না। মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কথা কী বলব, অনেকেই তাঁর সমালোচনা করেন। অনেকে বিশ্বসাহিত্য থেকে যেকোনো বই অনুবাদ করে নিজের নামে চালিয়ে দেন। বর্তমানে সাহিত্যিকরা এটা করছে। তারা নিজেদের মেধা খুব কমই ব্যবহার করে। অনেকের পড়াশোনাও খুব কম। বলা হয়ে থাকে যে, কাজী নজরম্নল ইসলাম যতটুকু লিখেছেন, তার চেয়ে ৫০ গুণ লেখাপড়া করেছেন। না পড়ে তিনি লেখেন নাই। আমাদের বাংলাদেশের সাহিত্যিকরা পড়তেই চান না। ফলে শিশু-কিশোররা ভালো বই খুব কম পাচ্ছে। যিনি শিশুদের জন্য লিখবেন, তাকে অবশ্যই অনেক বিষয়ের প্রতি লড়্গ রেখে যত্ন নিয়ে লিখতে হবে। যেনতেনভাবে শিশুসাহিত্য হয় না।

প্রকাশকদের উদ্দেশে কী বলবেন?

গিয়াসউদ্দিন : এখন লেখকরাও বেশি লেখে, প্রকাশকরাও বেশি প্রকাশ করে। একজন প্রকাশককে বই বের করতে হলে তাকেও লেখাপড়া করতে হবে। জানতে হবেÑশিশুরা কী চায়? শিশুর মেধা কীভাবে বিকশিত হতে পারে সেই বিষয়ের প্রতি লড়্গ রেখে বই প্রকাশ করতে হবে। শিশুসাহিত্যের প্রকাশকদের এই ধারণা না থাকলে জাতি পিছিয়ে যাবে। একজন সাহিত্যিক এসে পা-ুলিপি দিলো আর ছেপে দিলাম, এটা করা যাবে না। এরকম কিছু প্রকাশক আছে বাংলাবাজারে, যাদের কিছু টাকা দিলে তারা বই ছেপে দেয়। এ ধরনের প্রকাশকদের জন্যও আমাদের শিশুসাহিত্য অনেক পিছিয়ে আছে।

Author

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular