শাহাদুজ্জামান মূলত কথাসাহিত্যিক। গল্প, উপন্যাসের পাশাপাশি গবেষণা, অনুবাদ, ভ্রমণ এবং প্রবন্ধসাহিত্যেও তার লেখনী সমান সচল। লেখালেখির শুরু আশির দশকে। রাজনীতি সচেতন এই লেখক জীবনের মৌলিক প্রশ্নের জবাব সাহিত্যের মাধ্যমে খুঁজে পেতে চান। ‘কয়েকটি বিহ্বল গল্প’ তার প্রথম গল্পগ্রন্থ। বইটি তাকে দ্রুত পাঠক-স্বীকৃতি পাইয়ে দেয়। পাঠক, বিদগ্ধজনের সমান সমাদর পাওয়া শাহাদুজ্জামান বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা এবং গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাশেদ সাদী
- রাশেদ সাদী: ‘একজন কমলালেবু’—কবির জীবনীভিত্তিক উপন্যাস। ‘বিসর্গতে দুঃখ’ যে বইটি বেঙ্গলবুকস থেকে ইলাস্ট্রেশনসহ নতুনরূপে প্রকাশিত হচ্ছে। এখানে একজন জীবনানন্দ আরেকজন শফিক—দুই রকমের দুটি প্রোটাগনিস্ট। চরিত্রগুলো সৃষ্টিতে কোন ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে?
শাহাদুজ্জামান: জীবনানন্দ একজন বাস্তব চরিত্র আর শফিক কাল্পনিক। একজন কমলালেবু লিখতে গিয়ে আমাকে বিস্তর গবেষণা করতে হয়েছে জীবনানন্দের চরিত্রের অথেনটিসিটি নিশ্চিত করার জন্য। যদিও সেখানেও কল্পনার আশ্রয় নিয়েছি কখনো কখনো। আর শফিক যেহেতু আমার নিজের তৈরি চরিত্র ফলে সে চরিত্র নির্মাণে আমার স্বাধীনতা ছিলো পুরোটাই। যদিও কোনো লেখকেরই তার চরিত্রের উপর পুরো অধিকার থাকে না। শফিক চরিত্রটিকেও একটা বিশেষ স্থান, কালের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করতে হয়েছে। ফলে আমাকে সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় রেখেই চরিত্রটা তৈরি করতে হয়েছে। জীবনানন্দ আর শফিক দুজন দুধরনের প্রোটাগনিস্ট ঠিকই তবে দুজনের হয়তো একটা মিলও আছে। দুজনই বেদনার সন্তান।
- রাশেদ সাদী: জীবনানন্দ ও শফিক—দুটি চরিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলোর ভিন্নতা কেমন ছিল?
শাহাদুজ্জামান: আগের প্রশ্নের উত্তর থেকেই এর উত্তর পাওয়া যাবে। জীবনানন্দ ঐতিহাসিক চরিত্র হওয়ার কারণে একটা নির্দিষ্ট কাঠামোর ভেতর এই চরিত্র সৃষ্টি করতে হয়েছে। তাছাড়া একজন কিংবদন্তী সম্পর্কে সব পাঠক-পাঠিকারই নিজস্ব ধারণা বা ভাবনা থাকে। অনেকেই তাদের নিজস্ব জীবনানন্দেও সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন আমার উপস্থাপিত জীবনানন্দকে। কারো মিলেছে কারো মেলেনি। যাদের মেলেনি তারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। ফলে এসব নানা পূর্ব ধারণা জীবনানন্দ চরিত্র নির্মাণে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ছিল। কিন্তু শফিক চরিত্রের ব্যাপারে এমন কোনো দায় ছিল না। সার্বিক স্বাধীনতার যেমন সুবিধা আছে চ্যালেঞ্জও আছে। জীবনানন্দের জীবনের গতিপথ আমার পুরোটা জানা কিন্তু শফিকের জীবন পরিক্রমার কিছুই জানি না আমি। লিখতে লিখতে শফিকের জীবনের পথ তৈরি করতে হয়েছে। তাকে আমি যে কোনো পথেই নিয়ে যেতে পারতাম। কোন পথে নেব সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া চ্যালেঞ্জের ছিল। তাছাড়া ‘একজন কমলালেবু’ একটা লিনিয়ার ন্যারেটিভের উপন্যাস। ‘বিসর্গতে দুঃখ’ তা নয়। এর কাঠামোটি একেবারেই অপ্রচলিত। এই কাঠামোতে একটা চরিত্র তৈরি করা চ্যালেঞ্জের। তাছাড়া সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের পতনের পরের প্রেক্ষাপটে এ উপন্যাস লেখা। শফিকের হতাশার একটা বৈশ্বিক, রাজনৈতিক মাত্রা আছে। সেসব বিবেচনায় নিয়ে লেখাটাও ছিল এক চ্যালেঞ্জ।
- রাশেদ সাদী: আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক সুবিদিত। তাঁর সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে আরো কিছু শুনতে চাই।
শাহাদুজ্জামান: ইলিয়াস ভাইকে নিয়ে আমি বিভিন্ন সময়ে লিখেছি। তার দীর্ঘ সাক্ষৎকার নিয়েছি। আমার সম্পাদনায় তাঁর ডায়েরি প্রকাশিত হয়েছে। ইলিয়াস ভাইয়ের বিষয়ে আমার ভাবনা জানতে সেসব লেখার কাছে ফিরে যেতে অনুরোধ করবো। এটুকু বলতে পারি, লেখক হিসেবে, মানুষ হিসেব ইলিয়াস ভাই আমাকে প্রভাবিত করছেন নানাভাবে। জীবনের ব্যাপারে অবিরাম অপার কৌতূহল জারি রাখতেন ইলিয়াস ভাই, গভীর পঠন-পাঠনের মাধ্যমে নিজের বিশ্ববীক্ষাকে সবসময় ঝালাই করতেন। অহং ছিল কিন্তু অহঙ্কার ছিল শূন্যের কোঠায়। তার সঙ্গে কথা বলে, ঘুরে, আড্ডা দিয়ে আমার নিজের লেখক সত্তা প্রভাবিত হয়েছে গভীরভাবে।
- রাশেদ সাদী: এখন এআই প্রযুক্তি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আলোচিত বিষয়। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাচ্ছি।
শাহাদুজ্জামান: আমি সম্প্রতি ‘ডিজিটাল মানব’ নিয়ে বক্তৃতা দিয়েছি কলাকেন্দ্র নামের প্রতিষ্ঠানে। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি। সংক্ষেপে এটুকু বলা যায় ইতিহাসের যে কোনো নতুন প্রযুক্তির মতোই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই প্রযুক্তির সুফল এবং কুফল নির্ভর করবে আমরা একে কীভাবে ব্যাবহার করবো তার উপর। এই নতুন প্রযুক্তি উপেক্ষা করার উপায় নেই। আগের যে কোনো প্রযুক্তির তুলনায় এর অভিঘাত অনেক বেশি মানুষের মনোজগতে। ডিজিটাল পৃথিবীতে নতুন ধরনের মানুষ তৈরি হচ্ছে। অনলাইন, অফলাইন জীবন, প্রাইভেট, পাবলিক জীবনের পর্দাগুলো কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। ফলে এ ধরনের প্রযুক্তির অভিঘাতের মাত্রা এবং ধরন একেবারে অন্যরকম। মানুষ এখনও তার পুরো রূপ স্পষ্ট করে বুঝে উঠতে পারেনি। তাছাড়া এর একটা রাজনৈতিক মাত্রাও আছে। কালে কালে দেখা গেছে নতুন প্রযুক্তির লাভটা প্রধানত ঘরে টেনেছে মূলত পশ্চিমা বিশ্ব। পরে সেগুলো ব্যবহৃত হয়েছে অনুন্নত দেশগুলোকে শোষণের নতুন অস্ত্র হিসেব। কৃত্রিম প্রযুক্তির ব্যাপারেও সে ঝুঁকি প্রবল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি বাংলাদেশের মতো একটা দেশের জন্য জরুরি, তবে এর সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থেনেতিক মাত্রাগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।
- রাশেদ সাদী: আপনার তিনটি নাটক নিয়ে বইমেলায় বেঙ্গলবুকস থেকে ‘শাহাদুজ্জামানের নাটক’ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। পৃথিবীর এই প্রাচীনতম শিল্পমাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাই?
শাহাদুজ্জামান: নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আমার দীর্ঘদিনের। আশির দশকে চট্টগ্রামে গ্রুপ থিয়েটারের সাথে যুক্ত ছিলাম। নাটক নিয়ে লেখালেখিও করেছি। কথাসাহিত্যিক হিসেবে নাটক লেখার কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। নাটক একটি দৃশ্যমাধ্যম এবং পুরো আখ্যান তৈরি করতে হয় সংলাপের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু কথাসাহিত্য রচনার প্রক্রিয়াটি ভিন্ন। নাটক লিখতে গিয়ে নিজের ভাবনা প্রক্রিয়াকে তাই বদলাতে হয়। তবে হাজার বছরের পুরনো এই মাধ্যম যার একটা নিজম্ব শক্তি আছে। নাটকে লিখতে গিয়ে সেই প্রক্রিয়াটি উপভোগ করছি। বেঙ্গলবুকস যে বইটি প্রকাশ করছে সেটি আমার প্রকাশনার ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
রাশেদ সাদী: আপনার গল্পের বয়নে গল্পের ভেতর গল্প থাকার একটি কৌশল লক্ষ করা যায়। গল্প লিখতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছেন, আবার নতুন করে শুরু করছেন। গল্পের ভেতর গল্প থাকার এই পদ্ধতির বিষয়ে পাঠকের অভিমত কী?
শাহাদুজ্জমান: আমার গল্পের অনুরাগী যেমন আছে, সমলালোচনাও আছে। আমার সাহিত্য আসলে ঠিক কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আমার অনেক গল্প, না-প্রবন্ধ, না-ইতিহাস— এমন প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। যারা সাহিত্যের প্রচলিত পাঠাভ্যাসের বাইরে যেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না তাদের অনেকের কাছেই এই লিনিয়ার ন্যারেটিভ ভেঙে ফেলা হয়তো ভালো লাগেনি। কিন্তু গল্পের ভেতর গল্প আমাদের এই অঞ্চলে বহু পুরনো একটা বয়ান পদ্ধতি। অধিকাংশ লোকশিল্প-মাধ্যমে এই পদ্ধতি আছে। পালাগানে, যাত্রায়, কীর্তনে এক গল্পের ভেতর আরেক গল্প ঢুকে যায়। এর পপুলার একটা ফর্ম রয়েছে হাটে বাজারে যারা বিভিন্ন ওষধুপত্র বিক্রি করে; ‘ক্যানভাসার’ বলে পরিচিতি তারা। আমি এই ক্যানভাসারদের বয়ান থেকেও অনুপ্রাণিত হয়েছি।
- রাশেদ সাদী: ‘ক্রাচের কর্নেল’ উপন্যাসটি বাংলাসাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক ইতিহাস বিনির্মাণে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
শাহাদুজ্জামান: ‘ক্রাচের কর্নেল’ বইটির বহু সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। অনেক পাঠক-পাঠিকার নিয়মিত প্রতিক্রিয়া পাই। বইটি বাংলাদেশের রাজনীতির একটা বিশেষ কালপর্ব সম্পর্কে পাঠক-পাঠিকাকে কৌতূহলী করেছে, প্রশ্ন জাগিয়েছে; সেটা হয়তো বলতে পারি। একটা বই রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বটে, পরোক্ষভাবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক ইতিহাস তো অনেক জটিল পরিক্রমার ভেতর দিয়ে গেছে। আর বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০০৮ সালে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতিতে এই বই প্রভাব ফেলেছে বলাটা সমীচীন হবে না।
- রাশেদ সাদী: গল্প উপন্যাস নাটক—নিজের লেখার ক্ষেত্রে শিল্পের কোন বিষয়টিকে আপনি এগিয়ে রাখবেন?
শাহাদুজ্জামান: আমার নিজের লেখালেখির কোনোটিকেই আমি এগিয়ে বা পিছিয়ে রাখি না। লেখা তো প্রতিযোগিতার ব্যাপার না। আমি নিজের তাড়না থেকে লিখি। যে তাড়না যে মাধ্যমে প্রকাশে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি সে মাধ্যমে লিখি। এগিয়ে-পিছিয়ে রাখেন বোধহয় পাঠক-পাঠিকারা। তারা আমার নানা রকম লেখা থেকে তাদের পছন্দমতো লেখা বেছে নেন।
- রাশেদ সাদী: চলচ্চিত্র নিয়েও আপনার লেখা রয়েছে। সাহিত্যের সঙ্গে চলচ্চিত্রের যোগাযোগটা কী?
শাহাদুজ্জামান: একসময় আমি ভীষণভাবে যুক্ত ছিলাম চলচ্চিত্রের সঙ্গে। চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলাম। বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির প্রকাশনা সম্পাদক ছিলাম। ফিল্ম এপ্রেসিয়েশন কোর্স করেছি। তারেক মাসুদ, মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল প্রমুখের সাথে চলচ্চিত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথেও যুক্ত ছিলাম। একসময় ফিল্মকেই আমার কাজের প্রধান ক্ষেত্র করবো ধরে নিয়েছিলাম। এমনকি মস্কো ফিল্ম ইন্সটিটিউটে ভর্তির প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেছিলাম। ফলে আমার মানস জগতে চলচ্চিত্রের একটা বড় প্রভাব আছে। চলচ্চিত্র থেকে লেখায় চলে আসার ফলে আমার লেখাতে চলচ্চিত্রের একটা পরোক্ষ প্রভাব হয়তো আছে। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে দেখার ব্যাপারটা জরুরি। আমি যখন গল্প উপন্যাস লিখি তখন পাঠক-পাঠিকাকে গল্পটা দেখাবার একটা প্রবনতা থাকে। আমার চোখের নিচে যে দৃশ্য ফুটে উঠছে ভাষার ভেতর দিয়ে আমি পাঠক-পাঠিকার কাছে তা পৌঁছে দিতে চাই। আমার লেখায় একটা ভিজুয়াল ব্যাপার আছে বলে আমার মনে হয়, যা চলচ্চিত্রের প্রভাব বলেই আমার ধারণা।
- রাশেদ সাদী: শিশুসাহিত্য নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই?
শাহাদুজ্জামান: নিজের শৈশব মনে পড়ে। পাঠক হিসেবে সেই বয়সে কত বই আমাকে নিয়ে গেছে আশ্চর্য আনন্দ আর কল্পনার জগতে! বই শিশুদের মানসগঠনে খুব জরুরি ভূমিকা পালন করে। কিন্তু প্রয়োজন তেমন শক্তিশালী শিশুসাহিত্য। শিশুদের জন্য তেমন রচনা বিস্তর হওয়া দরকার।
- রাশেদ সাদী: এর আগে আমার সঙ্গে এক কথোপকথনে শিশুদের জন্য লেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সেটা কতদূর?
শাহাদুজ্জামান: শিশুসাহিত্য লেখা আমার কাছে খুব দুরূহ মনে হয়। আজকের শিশুদের বুঝে তাদের উপযোগী বই লেখার যোগ্যতা এখনও আমার হয়েছে বলে মনে হয় না। পরিকল্পনা আছে হয়তো লিখব কখনো।
- রাশেদ সাদী: বইমেলার যে বর্তমান অবকাঠামো এবং কর্যক্রম এর সঙ্গে নতুন কিছু কি যুক্ত করার প্রয়োজন বোধ করেন? বইমেলা নিয়ে আপনার চিন্তা জানাতে চাই।
শাহাদুজ্জামান: সেই আশির দশকে শুরু থেকে নিয়মিত বইমেলায় যাতায়াত করি। সেই সময়ের সাথে তুলনা করলে বইমেলা তো এর কার্যক্রমে, পরিসরে বিস্তৃত হয়েছে। যে কোনো কিছু আয়োজনে বৃহৎ হতে থাকলে তার প্রাথমিক পর্যায়ের যে ঘনিষ্ঠতা, আন্তরিকতা সেটা ব্যাহত হয়। সেটা স্বাভাবিক পরিণতি। এই প্রসারের ইতিবাচক অনেক ব্যাপার আছে। বইমেলা একটা জাতীয় পর্যায়ের উৎসব হয়ে উঠেছে, প্রকাশনা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। তবে বইমেলার কোটি টাকার ব্যবসার সঙ্গে সাহিত্যের উৎকর্ষের সম্পর্ক নেই; মনে রাখা দরকার। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এমন বৃহৎ পরিসরের বইমেলা হয় না। বহু দেশে কোনো বইমেলাই হয় না। কিন্তু সেসব দেশে সৃষ্টি হয় অসাধারণ সব সাহিত্য। বিজ্ঞাপন, গণমাধ্যম ইত্যাদি মিলিয়ে বইমেলার সময় একটা হৈ-হুল্লোড় অবস্থা তৈরি হয়। এতে নানা বিভ্রান্তিরও জন্ম হতে পারে। বই, সাহিত্যকেন্দ্রিক নানা কর্মকাণ্ড সারা বছর, দেশের নানা প্রান্তে হওয়া দরকার। তবু এই ফেব্রুয়ারির সময় বইমেলাকে ঘিরে এই যে বিপুল আগ্রহ তৈরি হয় একে আরো কীভাবে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা যায়, ভেতরকার স্থাপনা, চলাচল এসবকে আরো কীভাবে সুশৃঙ্খল করা যায় সেসব নিয়ে ভাবা উচিত।