Homeনন-ফিকশনবই পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে প্রজন্মকে সম্যক ধারণা দেয়া প্রয়োজন

বই পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে প্রজন্মকে সম্যক ধারণা দেয়া প্রয়োজন

লাইজু আক্তার: বই পাঠ মানুষের জ্ঞানের দ্যুতি বাড়ায়, মানুষকে আলোকিত করে। অনিয়ম-অন্যায়কে মুছে দিতে শেখায়। মানবের জীবসত্তা সদা জাগ্রত কিন্তু মানবসত্তা ঘুমন্ত। আর এই ঘুমান্ত মানবসত্তাকে জাগ্রত করার বড় উপায় হচ্ছে বই পড়া। বই এমন বন্ধু যা কখনোই ধোঁকা দেবে না, একা করে দেবে না।

বই পড়ার উপকারিতা অনেক। ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে, আত্মসম্মান বোধ তৈরি করে, লেখনী শক্তি বৃদ্ধি, শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি, স্মরণ শক্তির বৃদ্ধি ঘটে, কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি করে, অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ, মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, মানসিক উদ্দীপনা তৈরি করে, জ্ঞান বৃদ্ধি করে প্রভৃতি। এরপরও পাঠক কম বইয়ের সংখ্যার চেয়ে!  এর বড় কারণ হচ্ছে বইয়ের বিপণন তেমন করা হয় না। এছাড়া ডিজিটাল ডিভাইসের অভিঘাত তো আছেই। প্রজন্ম এখন ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর এত আকৃষ্ট যে অন্য দিকে মন দেয়ার সময় নেই তাদের। ব্যস্ততার মধ্যেও ডিজিটাল ডিভাইসের জন্য দিনের বড় একটা সময় বরাদ্দ থাকে।

একসময় বাড়ির বড়রা অবসরে বই পড়তেন। কেউ নিয়ম করে বই পড়তেন। এটি অন্যদের উৎসাহ বাড়িয়ে দিতো। কিন্তু বর্তমানে পরিবারের বড় সদস্যরা এতই ব্যস্ত যে, দিনে কিংবা রাতের কোনো সময় তাদের হাতে বই দেখা যায় না। ফলে পরিবারের ছোট সদস্যরাও বই পড়ার দিকে কৌতূহলী না। সবাই বই ছেড়ে মোবাইল গেমে আসক্ত। অথচ বাসা-বাড়িতে আরাম কেদারায় বসে কত সহজে একটা বই পড়ে জানা যাচ্ছে উন্নত দেশের প্রভাবশালী হওয়ার কারণ।

একটা গবেষণামূলক বই লিখতে কয়েক বছর লেগে যায় আর একজন পাঠক চাইলে এক-দুই দিনেই পড়ে শেষ করতে পানে সেই বই!

বই মনের পরিধি বাড়ায়। বই পড়লে মানসিক, শারীরিক উন্নতি হয়, হতাশা দূরে সরে যায়। হতাশা যদি জীবন থেকে সরে যায়, আয়ু তো বাড়বেই। বই পড়লে সৌজন্যবোধ তৈরি হয়, যা সবার কাছে নিজেকে আলাদা একজন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।

বই পড়া ডিমেনশিয়া ও আলঝইমার রোগ প্রতিরোধ সহায়তা করে। বই পড়া নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী দেখলে দেখা যায়, ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট তার পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা নিয়মিত বই পড়তেন। বিল গেটস প্রতি বছর ৫০টি বই পড়া শেষ করেন। ইলন মাস্ক রকেট সায়েন্সের বিদ্যা বই পড়ার মাধ্যমেই অর্জন করেছেন। এত ব্যস্ত আর বিখ্যাত ব্যক্তিরা নিয়ম করে বই পড়েন, তবে  আমরা কেন পড়ব না!

বই পাঠকের মনোজগৎকে সমৃদ্ধ করে। মন ও মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ আলাদাভাবে পরিচালিত হয়। মন অনেক সময় পরিচালিত হয় সমাজের আশপাশের বিশ্বাস-অবিশ্বাস, কুংস্কার ও আচার-আচরণ নিয়ে কিন্তু মেধা সেটাকে যুক্তি চিন্তার মাধ্যমে পরিচালিত করে। যখন কেউ একটি বই পড়ে তখন তার ব্রেইন তার চিন্তার গতিময়তার মাধ্যমে তাকে চালিত করে। ফলে মনোজগতের অন্ধকার, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস থেকে তাকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

সমাজে কত অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে যেমন, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে পালিয়ে গেছে, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছে দশম শ্রেণির ছাত্র। এসব মূলত ঘটছে তাদের আত্মা অন্ধকারে নিমগ্ন। পরিবারে তারা বই পড়ার সুযোগ পায়নি, তাদের বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করা হয়নি। এ ব্যর্থতার পুরোই ভিকটিম দায়ী নয়। যারা দিনের বেশি সময় বইয়ের পাতায় নিমগ্ন থাকে তাদের মনে আত্মহত্যা কিংবা কোনো অপচিন্তা কাজ করে না। তাদের চিন্তাশক্তি অন্যদের  চেয়ে উন্নত।

রাষ্ট্র প্রজš§কে মানবসম্পদে পরিণত করতে হিমশিম খাচ্ছে। মনে হয় দেশ জাতিগতভাবে উন্নয়নের দিকে ধীরে চলে, পিছিয়ে পড়ে, আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এর মূল সমস্যা আমাদের পাঠক সংখ্যা কম। ফলে তারা জানেও কম। এ অবস্থায় সৃজনশীল প্রজš§ গড়ে ওঠে না। তাই আমাদের নিজেকে বই পড়তে হবে, অন্যকে পড়তে উৎসাহী করতে হবে, জানতে হবে, জানাতে হবে। তবেই একদিন এমন প্রজন্ম গড়ে তুলতে সক্ষম হবে, যাদের মাধ্যমে দেশ বিশ্বে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্থান করে নিতে পারবে।

শিক্ষার্থী

নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ

Author

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular