Homeবুক রিভিউ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ আমাদের জেনারেশনের প্রথম কবিতার বই | নির্মলেন্দু গুণ

‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ আমাদের জেনারেশনের প্রথম কবিতার বই | নির্মলেন্দু গুণ

আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ আমি উৎসর্গ করি আমার বাবার নামে।

উৎসর্গপত্রটি ছিল এরকম :

‘আমার বাবার মতো সবাই যদি আমাকে স্বাধীনতা দিত’। ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি সচেতনভাবেই বইয়ের উৎসর্গপত্রে ব্যবহার করি।

আমার বইটি শুধু আমার প্রথম বই ছিল না, ছিল আমাদের জেনারেশনের প্রথম কবিতার বই। আমি স্থির করি আমার বইটিকে আমি নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করব। আমার শিল্পী বন্ধু কাওসার আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে আলোচনা করি। একদিন আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে স্থির করি, প্রচ্ছদে আমার শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখচ্ছবি ব্যবহার করব। এক সন্ধ্যায় কাওসার আমাকে নিউমার্কেটের একটি স্টুডিওতে নিয়ে যায় এবং বিভিন্ন পোজে আমার বেশ কিছু ছবি তোলে। পরে ওইসব ছবির ভেতর থেকে বেছে একটি চমৎকার অর্থবহ ছবি আমার কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদের জন্য নির্বাচন করে।

বইয়ের নামকরণে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত আমাকে সাহায্য করেছিলেন। তিনি বলেন, আপনি ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ শীর্ষক কবিতাটির ভিত্তিতেই কাব্যগ্রন্থটির নামকরণ করতে পারেন। আপনার কাব্যগ্রন্থের জন্য মানানসই হবে। নামের ব্যাপারে জ্যোতিপ্রকাশের সঙ্গে পূরবী বসুও একমত হওয়াতে, আমি আর দ্বিমত করিনি। আর যে নামগুলো আমি বিবেচনায় রেখেছিলাম, সে নামগুলো ছিল : হুলিয়া, দাঁড়ানো মহিষ এবং আগুন নিয়ে বসে আছি।

আলেকজান্দ্রা প্রেসে বড় লাইনো টাইপ ছিল না, ছিল দৈনিক পাকিস্তানে। সেখান থেকে টাইপ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে, ছোটগল্প পত্রিকার সঙ্গে জড়িত শিল্পী গোপাল মণ্ডলের শরণাপন্ন হই। তিনি দৈনিক পাকিস্তানের ফাইল ঘেঁটে বিভিন্ন খবরের শিরোনাম থেকে একই মাপের টাইপ কেটে কেটে বইয়ের নাম এবং অপেক্ষাকৃত ছোট টাইপ কেটে কবির নামটি তৈরি করে দেন। বাংলাবাজারের চুন্নু মিয়ার ব্লক তৈরির কারখানা থেকে প্রচ্ছদের জিংক ব্লক তৈরি করা হয়। বাবুবাজারে ‘অবলাপল্লীর’ নিকটবর্তী খেয়ালী আর্ট প্রেস নামক একটি প্রেসে বইয়ের প্রচ্ছদটি ছাপা হয়। লাল রঙের রিভোর্সে সাদা হরফে ছিল লেখক ও বইয়ের নাম। আর কালো রঙে হাফটোনে পাতাজুড়ে ছিল আমার শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখাবয়ব। প্রচ্ছদটি ছিল খুবই অ্যাটাকিং।

১৯৭০ সালের দ্বিতীয় পক্ষে আমার বইটি বাজারে ছাড়া হয়। লাইনো টাইপে ছাপা, একশ গ্রাম আর্ট-পেপারের জ্যাকেটে বন্দি চার-ফর্মার বইটির দাম রাখা হয় তিন টাকা। কিছু দিনের মধ্যেই ব্যতিক্রমধর্মী প্রচ্ছদ এবং উত্তপ্ত রাজনৈতিক কবিতা থাকার কারণে বইটি পাঠকমহলে সাড়া জাগায় এবং আশাতীত বিক্রি লাভ করে। এতে প্রকাশক খুশি হন। তিনি বইয়ের জন্য ১২.৫ শতাংশ হারে রয়্যালিটি স্থির করে আামকে একশ টাকার মতো অগ্রিম দিয়েছিলেন।

‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হওয়ার পর, আমি খুবই ক্লান্ত বোধ করি। আমার মনে এইরূপ ধারণা সৃষ্টি হয় যে, এই কাব্যগ্রন্থটি করার জন্যই একদিন হুলিয়া মাথায় নিয়ে এই নগরীতে পালিয়ে এসেছিলাম। ঢাকা তার উষ্ণ-নিরাপদ পক্ষপুটে আমাকে ভালোবেসে আশ্রয় দিয়েছে।

Author

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular